স্ট্রোক হলে ভয় নয়, প্রয়োজন সচেতনতা
স্ট্রোকের কারনে মস্তিষ্কের রক্তনালি বন্ধও হতে পারে, আবার ফেটেও যেতে পারে। এ কারণে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। সচেতনতার অভাবে স্ট্রোকে আক্রান্তের হার বেড়েই চলেছে। দেশে স্ট্রোকের হার প্রতি হাজারে ৭-১৮ জন এবং ৮ শতাংশ মানুষ স্ট্রোক ঝুঁকিতে রয়েছে। পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিদের স্ট্রোক আক্রান্তের হার বেশি হলেও যে কোন বয়সে স্ট্রোক হতে পারে। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু স্ট্রোকে আক্রান্ত নারীদের পরিনতি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ।
স্ট্রোকের ঝুঁকির কারণ-
-অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস, রক্তে অতিমাত্রায় কোলেস্টেরল এবং এসব রোগের ওষুধ বন্ধ করা স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় কারণ।
-অতিরিক্ত টেনশন, অনিয়ন্ত্রিত অলস জীবনযাপন করা, ঘুমের সময় নাক ডাকা, বেশি বেশি চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া, স্থূলতা, অতিরিক্ত মাত্রায় কোমল পানীয় গ্রহণ, এবং অধিক পরিমাণে লবণ খাওয়া। ধূমপান, তামাক পাতা, গুল, জর্দা, মাত্রাতিরিক্ত মাদক সেবন।
-যে কোনো ধরণের প্রদাহ, যেমন -এসএলই অথবা ইনফেকশন, যেমন- করোনা বা মস্তিষ্কে ও ঘাড়ে সরু রক্তনালি থাকা।
-অনেক সময় বংশানুক্রমে বা পূর্বের স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, হার্টের ভাল্বে সমস্যা, অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হওয়ার কারণেও স্ট্রোক হতে পারে।
স্ট্রোকের লক্ষণসমূহ:
-শরীরের একাংশ প্যারালাইসড অর্থাৎ হঠাৎ করে অবশ ভাব লাগা কিংবা দুর্বল বোধ করা। পা, হাত, মুখ অথবা শরীরের একাংশ অবশ হয়ে যাওয়া, পা দুর্বলবোধ করা।
-চলাফেরা করতে না পারা, চলাফেরায় ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্রমে অসামঞ্জস্য দেখা দেওয়া।
-কথা বলতে সমস্যা হওয়া, কথা জড়িয়ে আসা, অস্পষ্ট হওয়া এবং একেবারে কথা বলতে বা বুঝতে না পারা।
-এক চোখ বা দুই চোখেই ক্ষণস্থায়ী ঝাপসা দেখা বা দৃষ্টি ঘোলা লাগা বা একেবারেই না দেখা।
স্ট্রোকের সঠিক চিকিৎসা না নেওয়া হলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই কেউ স্ট্রোক করলে নিকটস্থ স্ট্রোক কেয়ার ইউনিটে নিয়ে যাওয়া উচিৎ। তবে স্ট্রোক হলে তাৎক্ষণিক কি কি করণীয়, সেই বিষয়েও আমাদের সকলের অবগত থাকা প্রয়োজন।
স্ট্রোক হলে কী চিকিৎসা দিতে হবে:
-স্ট্রোকের সবচেয়ে আধুনিক চিকিৎসা হচ্ছে ‘থ্রম্বোলাইটিক থেরাপি’। এর মাধ্যমে ওষুধ প্রয়োগ করে দ্রুত মস্তিষ্কের জমাট বাঁধা রক্ত গলিয়ে ফেলা হয় এবং রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক করা হয়।
-স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীদের ইমারজেন্সি স্ট্রোক কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করাতে হবে। রোগীর উপসর্গ অনুযায়ী সমন্বিত স্ট্রোক কেয়ার টিমের ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা করাতে হবে, যেমন- যদি খেতে না পারে তবে নাকে নল দিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। প্রস্রাব ও পায়খানা যাতে নিয়মিত হয় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রস্রাবের রাস্তায় ক্যাথেটর দিতে হবে। চোখ, মুখ ত্বকের যত্ন নিতে হবে। বেডসোর প্রতিরোধ করার জন্য নিয়মিত পাশ ফেরাতে হবে।
-উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি অনেক স্ট্রোক রোগীর হার্টের রোগও থাকে।
-একজন স্ট্রোক রোগীর প্রয়োজন হয় স্ট্রোক নিউরোলজিস্টের। অনেক স্ট্রোক রোগীর অপারেশন অত্যন্ত জরুরী।
-রোগীর অঙ্গ সঞ্চালন করে জড়তা কাটিয়ে তুলতে রিহ্যাবিলিটেশন বা পুনর্বাসনের প্রয়োজন হয়।
-রোগী কথা বলতে না পারলে প্রয়োজন স্পিচ থেরাপিস্টের।
এভেরকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রামের স্ট্রোক কেয়ার ইউনিটে থ্রম্বোলাইটিক থেরাপি ও অন্যান্য আধুনিক চিকিৎসা চালু হয়েছে। যা দিয়ে আসবে সুফল, স্ট্রোক রোগী লাভ করবে আরোগ্য।
ডাঃ মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
কনসালটেন্ট – নিউরোলজি
এভেরকেয়ার হাসপাতাল, চট্টগ্রাম
ইমেইলঃ uddinn13@gmail.com