আপনি কি হেপাটাইটিস বি পজিটিভ?
হেপাটাইটিস বি ভাইরাসকে নীরব ঘাতক বলা হয়। বাংলাদেশেও এর প্রাদুর্ভাব বেশ লক্ষণীয়।
বিভিন্ন কারণে শারীরিক পরীক্ষা–নিরীক্ষা করাতে গিয়ে অথবা কাউকে রক্ত দিতে গিয়ে সাধারণত কারও শরীরে ভাইরাসটি ধরা পড়ে। কারণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি রক্তে সুপ্ত অবস্থায় দীর্ঘকাল রয়ে যায়।
তবে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সংক্রমণের সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না করা হলে পরবর্তী সময়ে লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসারসহ নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন হেপাটাইটিস বি পজেটিভ
আপনার শরীরে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের উপস্থিতি আছে কি না, এটা জানতে একজন পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসক নানা দিক পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরামর্শ দেবেন। এখানে বলে রাখা ভালো, এই রোগের চিকিৎসা ও ফলোআপ সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে সারা জীবন চিকিৎসা নেওয়ারও প্রয়োজন হতে পারে।
হেপাটাইটিস বি নিরাময় সম্ভব
হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের চিকিৎসা নেই—অনেকের মধ্যে এমন ভুল ধারণা আছে। আবার অনেকে মনে করেন, কোনো সমস্যা যেহেতু হচ্ছে না, তাহলে চিকিৎসার কী দরকার। আসলে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস নির্মূলে বর্তমানে খুবই কার্যকরী কিছু ওষুধ রয়েছে। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় সঠিক চিকিৎসা করলে অনেক ক্ষেত্রে এটি নিরাময় সম্ভব। তা ছাড়া চিকিৎসা নিলে এই ভাইরাসজনিত জটিলতা যেমন লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসার থেকে বেশির ভাগ রোগীকে বাঁচানো সম্ভব।
হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে
কোনো ব্যক্তি এই ভাইরাস বহন করছেন জানতে পারলে তাঁর উচিত হবে পরিবারের অন্য সদস্যদের বিশেষ করে মা–বাবা, ভাই-বোন ও সন্তানদের শরীরে এই ভাইরাস আছে কি না, সেটাও জেনে নেওয়া। কারণ, যাঁদের শরীরে এ ভাইরাস নেই, তাঁরা টিকা দিয়ে খুব সহজেই এই ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।
কোনো গর্ভবতী নারী যদি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের রোগী হয়ে থাকেন, তাঁর উচিত হবে গর্ভকালীন গাইনি এবং পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিশেষজ্ঞের অধীনে থাকা। সন্তান প্রসব অবশ্যই হাসপাতালে হতে হবে। কারণ, এ সময় মায়ের কাছ থেকে তাঁর গর্ভের সন্তানের শরীরে এই ভাইরাস চলে যেতে পারে। সে জন্য সন্তান জন্মানোর পরে সন্তানকে এই ভাইরাস প্রতিরোধে দ্রুত টিকা দিয়ে দিতে হবে।
উপসর্গ
আক্রান্ত রোগীর কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে। এই রোগের সুপ্তবস্থা (ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রোগের লক্ষণ পর্যন্ত) প্রায় ৪ সপ্তাহ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত সময় লাগে। এক্ষেত্রে ফ্লু-এর মতো জ্বর, ক্লান্তিবোধ, শরীর টনটন করা, ব্যথা, বমিভাব এবং ক্ষুধামন্দা-এই রোগের লক্ষণ।
কাদের ঝুঁকি বেশি?
- ১. রোগাক্রান্ত মায়ের নবজাতকেরা।
- ২. ইনজেকশন দিয়ে যারা নেশা গ্রহণ করেন।
- ৩. আক্রান্তের পরিবারের ঘনিষ্ঠ জনেরা এবং তার সঙ্গী বা সঙ্গিনী।
- ৪. স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত কর্মীরা যারা রক্তের সংস্পর্শে প্রায়শই আসেন, যেমন- শল্য চিকিৎসক, ডায়ালিসিস ইউনিট ও প্যাথলজি বিভাগের কর্মীরা, দাঁতের ডাক্তার, নার্স।
রোগের প্রতিরোধে করণীয়
- ১. যৌন মিলনের সময় কনডম ব্যবহার করুন।
- ২. সালাদ, ফলমূল বেশি খাবেন। তেল-চর্বি যুক্ত খাবার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
- ৩. মাটন খাবেন না। লবণ খাদ্যতালিকা থেকে বাদ রাখুন।
- ৪. প্রতিদিন অন্তত ৪০ মিনিট হাঁটবেন।
- ৫. ব্যায়ামের অভ্যাস করবেন।
- ৬. দিনে একবেলার বেশি ভাত খাবেন না, দুই বেলা রুটি খাবেন। ধূমপান, মদ্যপান নিষিদ্ধ।
- ৭. HBsAG পরীক্ষা করুন এবং যথাসম্ভব দ্রুত হেপাটাইটিস-বি এর প্রতিষেধক নিন। এতে অনেক দ্রুত রোগটিকে আটকানো যায়।
মনে রাখা জরুরি: এই ভাইরাস বহনকারী ব্যক্তি কাউকে রক্ত দিতে পারবেন না।
তথ্যসূত্রঃ
https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/hepatitis-b
https://www.webmd.com/hepatitis/digestive-diseases-hepatitis-b
আরো পড়ুনঃ কি রোগের জন্য কোন ডাক্তার দেখাবেন?